মহালয়ারদিনবদলেএকইআবাহনীসুর। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সুরের মূর্ছনায় আজও বাঙালীর নেশা লাগে।

✍️রাজীব নন্দী

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠের জাদুতে আকাশ বাতাস সুরভিত।আজ 4 আগস্ট বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের জন্মদিন।

    "আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর,

ধরণীর বহিরাকাশি অন্তর্হিত মেঘমালা”

মহালয়ার দিন বদলের সুরে আজও শহর থেকে গ্রামের মাটির উঠোনে একই আবাহনী সুর।মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠের জাদুতে আজও বাঙানীর নেশা লাগে।মহালয়ার সুরেই জানান দেয় পুজো আসছে।কাশফুলের সাথে শরতের পেঁজা তুলোর মেঘে পাড়ি দিয়ে এসে পৌঁছায় বাঙালীর নস্টালজিক প্রাণের উৎসব।সাল ১৯৩১ থেকেই আকাশবাণী থেকে সম্প্রচার হতে শুরু করে মহিষাসুরমর্দিনী যা বাঙালীর আবেগ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে।প্রথমে কায়েতের ছেলে বলে চন্ডীপাঠে আপত্তি জানায় অনেকে কিন্তূ আকাশবানীর পঙ্কজ মল্লিকের জেদের বসেই সেদিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কন্ঠ দান করেছিলেন।যা আজ ইতিহাস হয়ে আছে।গঙ্গা দিয়ে এই দীর্ঘদিনের জয় যাত্রায় অনেক জল গড়িয়ে গেছে কিন্তূ বাঙালীর আবাহনে মাধ্যম বদলালেও সুর রয়ে গেছে একই।বাঙালীর প্রাণের রেডিও আজ বাক্স বন্দী মোবাইল ,টিভি,সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে আজ ভার্চুয়ালী গানে, কবিতায়, নৃত্যে মহালয়া পালিত হলেও মহালয়ার ঐতিহ্যবাহী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠ মালার বিকল্প হয়নি।সেকাল একালেও চির প্রাসঙ্গিক রয়েছেন তিনি।
দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে কলকাতার ও গ্রামের শরৎকাল। শরৎ মানেই শারদীয় দুর্গোৎসব।
শারদ উৎসবের সুর শুরু হয় মহালয়ার দেবীপক্ষের সূচনার মধ্য দিয়ে।

একদিকে ভোররাতের ফোটা শিউলি ফুলের সুরভির সাথে শরতের আবাহনী সুর বেজে ওঠে। অন্যদিকে চণ্ডীপাঠের চিরাচরিত সুরে পিতৃতর্পণের উদ্দেশ্যে গঙ্গার ঘাটে জমা হন সনাতন ধর্মের মানুষরা।
তখনকার দিনে কলকাতার মহালয়া শুরু হতো আকাশবাণী কলকাতায় ভোরবেলা বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠের সুরে।
এখনো একই সুরে সুরভিত বাঙালী মনন।
আজও আকাশবাণীতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ বাজিয়ে শোনানো হয়।
রামধন মিত্র স্ট্রীটের গলিতে পা দিলে সময় যেন পিছিয়ে যায় ।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের হলুদ রংয়ের একটা বিশাল বাড়ির সামনে সাদা পাথরের ফলক। লেখা, স্বর্গীয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সঙ্গে জন্ম-মৃত্যুর তারিখ। তার নীচে পাথরে খোদাই করা তিনটে লাইন, ‘এই বাড়িতেই আমৃত্যু বাস করেছেন বেতারে মহিষাসুরমর্দিনীর সর্বকালজয়ী অন্যতম রূপকার এই সুসন্তান।’
তিনি এখনো বাঙালীর মননে ভাবনায় উদ্ভাসিত।
১৯৭৬ সাল ,রেডিয়োতে সে বার মহিষাসুরমর্দিনী প্রচারিত হয়নি। হয়েছিল, ‘দুর্গা দুর্গতিহারিণী’। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে যা উত্তমকুমারের মহালয়া বলে প্রচলিত।বাঙালী বিক্ষোপে ফেটে পড়েছিলো।আকাশবাণী বাধ্য হয়ে ষষ্ঠীর দিন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া চালাতে বাধ্য হয়েছিলো।রবীন্দ্রনাথ, বিধানচন্দ্র রায় থেকে উত্তমকুমার, তিন কিংবদন্তির প্রয়াণ যাত্রার ধারাবিবরণীও দিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। যে রেডিওর জন্য এতকিছু, তারা অবশ্য শেষ বয়সে পেনশনও দেয়নি।
মহালয়ার দিনবদলের ধারায়ও এখনো রয়ে গেছে একই সুরে।মহালয়ার ভোরে বেজে ওঠে সেই সুরভী কন্ঠ-
“জাগো তুমি জাগো জাগো দূর্গা জাগো দশ প্রহরণ ধারিণী
আভায় শক্তি বলো প্রাদায়িনী তুমি জাগো
জাগো তুমি জাগো
প্রণমি বরাদ আজলা অতুল
বাহুবলধারিনী রিপুদলাবাড়িনি
জাগো মা জাগো মা
যারা ওময়ী গান্ধী কে শঙ্করী জাগো
জাগো মা
জাগো অসুর বিনাশিনী তুমি জাগো
জাগো দূর্গা জাগো দশ প্রহরণ ধারিণী
আভায় শক্তি বলো প্রাদায়িনী তুমি জাগো
জাগো তুমি জাগো।”
বাঙালীর পূজার সুরভিতে শারদ উৎসব এক মহান উৎসব হয়ে উঠেছে।সেই উৎসবের আবহ তৈরী করে দিয়ে যায় মহালয়া।ভার্চুয়াল আধুনিক জীবনে সমাজ এখন ফেসবুক হোয়াটস আপ এ শরতের কাশফুল দেখে মহালয়ার কবিতা লেখে।বিভিন্ন চ্যানেলে শুরু হয়ে যায় নায়িকা দের নিয়ে মহালয়ার অনুষ্টান।
আধুনিকতার রূপাঞ্জলীতে মহালয়ার ঐতিহ্য আজও বাঁধা আছে আহারিটোলার কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও সরলা বলা দেবীর সন্তান বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠের জাদুতে।মহালয়ার ভোরে ফেসবুক ও হোয়াটস আপ ইন্সট্রাগম এর পাতা উল্টাতে উল্টাতে কোথাও যেনো মনে পড়ে বাড়ির এক কোনে ধূলী ধুসরিত রেডিওটিকে।মনে পড়ে আকাশবানী থেকে সম্প্রচারিত মহিষাসুরমর্দিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *